জাপানে বসবাসরত প্রিয় প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই ও বোনেরা
আসসালামু আলাইকুম ।
আমি আশা করি করোনাকালীন এই মহাদুর্যোগের সময়েও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন । আমি শাহাবুদ্দিন আহমদ জাপানে নিযুক্ত আপনাদের নতুন রাষ্ট্রদূত । বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এই দেশে দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করায় সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি ।
আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ । কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লক্ষ শহীদ, যুদ্ধাহত ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং সম্ভ্রম হারানো দুই লক্ষ মা-বোনদের, যাদের অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ । শ্রদ্ধাভরে আরও স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধুর সকল আন্দোলন, সংগ্রামের নেপথ্য অনুপ্রেরণাদায়ী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে শাহাদাৎবরণকারী সকল শহীদদের ।
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে, যিনি আমার উপর আস্থা রেখে এই দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করেছেন । তাঁর আস্থার মর্যাদা রক্ষায় আমার অভিজ্ঞতা, মেধা ও শ্রম দিয়ে আপনাদের সেবা ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে ইনশা আল্লাহ । এ প্রচেষ্টায় আমি আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি ।
প্রিয় প্রবাসী ভাই ও বোনেরা,
স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকে জাপানের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব দৃঢ়, গভীর ও পরীক্ষীত । কালের পরিক্রমায় জাপান এখন আমাদের সর্ববৃহৎ দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগি । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন জাপানের ন্যায় বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার । ইতোমধ্যে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা (এম ডি জি) অর্জনে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছি এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ (রূপকল্প-২০২১), ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এস ডি জি) অর্জন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এক দুর্নিবার উন্নয়ন অভিযাত্রায় শামিল হয়েছে । আর বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার প্রতিটি পর্যায়ে জাপান আমাদের পাশে থেকেছে, আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে আন্তরিকভাবে সক্রিয় সহায়তা করে যাচ্ছে । ২০২২ সালে বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী । আমার দৃঢ় বিশ্বাস এ মাইলফলককে সামনে রেখে আগামীতে দু’দেশের বন্ধুত্ব আরও জোরদার এবং উন্নয়ন সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত করতে সরকারের পাশাপাশি আপনাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে ।
প্রিয় প্রবাসী ভাই ও বোনেরা,
চলমান করোণা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশ ও জাপান সহ সমগ্র বিশ্ব আজ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে উদ্ভুত প্রতিকূলতা সত্বেও নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । বিশ্বব্যাপী এ মহাদুর্যোগকালে আমি আপনাদের সবাইকে মাস্ক পরিধান করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ জাপান সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি । আপনাদের চিকিৎসা সেবার সুবিধার্থে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশী ডাক্তারগণের সহায়তায় একটি চিকিৎসক-পুল গঠন করে (ডাক্তারদের নাম, টেলিফোন নাম্বার সহ) দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে । জাপান সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি সমূহও নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট-ফেসবুক পেইজে প্রচার করা হয়েছে/হচ্ছে । এছাড়া যে কোন সহায়তার প্রয়োজন হলে দূতাবাসের সাথে পরামর্শ করার জন্য আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি ।
আপনারা যারা দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে রয়েছেন, দেশকে বুকে ধারণ করে দেশের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, পরিশ্রমের কষ্টার্জিত উপার্জন দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতির ভীত মজবুত করছেন, প্রবাসে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই হবে আমার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ।
আপনাদের আমি বিনীতভাবে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, উন্নয়নের রোল মডেল এই দেশটিতে আপনারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দূত । বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি বাংলাদেশের পণ্য এবং শ্রম বাজারকে জাপানে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আপনাদের এ প্রচেষ্টাকে আরও বেগবান করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি । আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী ইনশা আল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বিশ্বদরবারে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে আরও উচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন হবে ।
আগামী বছর আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী । স্বাধীনতার পর বিগত প্রায় পাঁচ দশকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুর আজন্মলালিত স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের পথে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে । আসুন আমরা আমাদের প্রিয় দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলায় উন্নীত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই সোনার বাংলা বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করি । জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এটাই হোক আমাদের শপথ ।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন ।
আপনারা সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক